শহর কিংবা গ্রাম সারাদেশের মানুষের এখন প্রধান বিনোদন মাধ্যম টেলিভিশন। আর টেলিভিশনে পছন্দ মতো দেশ-বিদেশের চ্যানেল দেখতে হলে চাই ডিশলাইন। সেই কাজটি করে থাকে কেবল অপারেটররা। ঘরে ঘরে তার টেনে পৌঁছে দেয়া হয় ডিশলাইন। তবে এই অপারেটররা বৈধভাবে কিছু বিদেশী চ্যানেল দেখালেও ভারতীয় টাটা স্কাই কোম্পানির ডিটিএইচটি (ডিরেক্ট টু হোম) সিস্টেমের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশী বিভিন্ন চ্যানেল প্রদর্শন করে থাকে। আবার দর্শকরা এই চ্যানেলগুলো দেখলেও ডিশের কানেকশনে এইচডি (হাইডেফিনেশন) না থাকায় অনেক চ্যানেলই স্বচ্ছ দেখা যায় না। অন্যদিকে কেবল অপারেটররাও অনেক সময় সরকারী রাজস্ব দেয়ার ক্ষেত্রে সঠিক ভোক্তার উল্লেখ না করে কর ফাঁকির সুযোগ নেয়। এমন অবস্থায় টিভি দর্শকদের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি এই প্রথম দেশে ডিটিএইচ কোম্পানি খোলার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন এ কোম্পানিতে বেক্সিমকোর অংশীদার হয়েছে রাশিয়ার অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান জিএস গ্রুপ। বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স লিমিটেড নামে এ যৌথ প্রকল্প জিএস গ্রুপের সমন্বিত প্রযুক্তি দেবে দেশের টেলিভিশন গ্রাহক।
ডিটিএইচ প্রযুক্তির ফলে এখন দর্শকদের আর বাড়িতে ডিশের তার টানার ঝক্কি পোহাতে হবে না। এ প্রযুক্তিতে টিভি দর্শক নিজ বাড়িতে ছোট একটি রিসিভার ইন্সটলের মাধ্যমে সরাসরি স্যাটেলাইট সিগন্যাল গ্রহণের মাধ্যমে বিদেশী চ্যানেল দেখার সুবিধা পাবে। আলাদা তারের মাধ্যমে প্রতিটি টিভি সেটে সংযোগ দেয়ার প্রয়োজন হবে না। একই সঙ্গে বৈধভাবে বিদেশের অনেকগুলো চ্যানেল দেখার সুযোগের পাশাপাশি থাকছে স্বচ্ছ ইমেজের নিশ্চয়তা। প্রিপেইড সিস্টেমে এই সেবা প্রদান করা হবে। আর ট্যাক্স ফাঁকির সুযোগ না থাকায় সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
ডিটিএইচ সেবার মাধ্যমে একটি স্যাটেলাইট সিস্টেম ব্যবহার করে সরাসরি গ্রাহকের আঙিনায় টিভি সিগন্যাল পৌঁছে দিয়ে মাল্টি-চ্যানেল টিভি প্রোগ্রাম দেখার সুযোগ করে দেয়া হবে। এই সংযোগ দিতে ব্রডকাস্টিং কোম্পানি একটি ডিশ ও রিসিভার সেট প্রদান করবে, যা ডিশের মাধ্যমে সিগন্যাল গ্রহণ করে রিসিভিং সেটের সাহায্যে দর্শকরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেল দেখতে পারবেন। ওই সেটের মাধ্যমেই শুধু গ্রাহকরা কাক্সিক্ষত চ্যানেল সুযোগ পাবেন। ডিটিএইচের অনেকগুলো সুবিধার একটি হচ্ছে দর্শক তাঁর নিজের পছন্দের চ্যানেলগুলো বাছাই করতে পারবেন। এর ফলে কেবল অপারেটরের পছন্দের চ্যানেল দেখতে হবে না দর্শককে। নিজের পছন্দের চ্যানেল গ্রহণের ফলে ভোক্তার মাসিক খরচ কমে আসার সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া কেবল সংযোগের মাধ্যমে বর্তমানে গ্রাহকরা যে মানের ছবি দেখেন তার চেয়ে মান হবে অনেক উন্নত। কারণ, কেবলের মাধ্যমে টিভি দেখতে গেলে সিগনাল ব্রেক হয় অপরদিকে ডিটিএইচ প্রযুক্তিতে সিগনাল ব্রেকের সুযোগ নেই। ফলে পাওয়া যাবে উন্নতমানের সেবা।
বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, এ বছরের শেষ দিকে বাণিজ্যিকভাবে ডিটিএইচের কার্যক্রম শুরু হবে। যৌথ উদ্যোগে গৃহীত এই কার্যক্রমের আওতায় স্থানীয় ও শীর্ষ আন্তর্জাতিক চ্যানেলগুলো উপভোগের সুযোগ পাবেন টিভি দর্শকরা। আর ২০১৫ সালের মধ্যে ৩ লাখ গ্রাহককে এই সেবা দেয়া হবে। এর পর প্রতিবছর চার লাখ নতুন গ্রাহকের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ডিটিএইচ প্রযুক্তি সেবা গ্রহণের মূল্য নির্ধারিত হয়নি। তবে এটি গ্রহণের জন্য দর্শককে খুব বেশি মূল্য দিতে হবে না বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। বর্তমান ডিশলাইনের মূল্য বিবেচনায় রেখেই এই সেবা দর্শকের নাগালের মধ্যে রাখা হবে।
এ বিষয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমানে দেশে কোন বৈধ ডিটিএইচ অপারেটর নেই। টিভি দর্শকদের কয়েকটি কেবল অপারেটর ও টেরিস্ট্রিয়াল চ্যানেলের ওপর নির্ভর করতে হয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশী দর্শকদের কোন স্থানীয় টিভি অনুষ্ঠান উপহার না দিয়ে ভারতীয় ডিটিএইচ অপারেটররা অবৈধভাবে ডিটিএইচ সিগন্যাল ব্রডকাস্ট করছে। এ ছাড়া মানসম্মত বৈধ টিভি সার্ভিস নিয়ে যদিও কোন আলোচনা নেই, কিন্তু ১৫ কোটির বেশি মানুষের দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রাহক পাবে বলে প্রত্যাশা করছে বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স লিমিটেড।
আশার বাণী শুনিয়ে জিএস গ্রুপের বিদেশী প্রকল্প পরিচালক সের্গেই দোলগোপোলস্কি বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডিটিএইচ চালুর পথ মসৃণ করতে এ বছরই হেড-এ্যান্ড ও আপ-লিঙ্ক ইন্সটল করা হবে। এ ছাড়া পুরো বাংলাদেশেই পাওয়া যাবে আমাদের নেটওয়ার্ক।
:-s অসাধারন একটি ব্লগ পোষ্ট হয়েছে।
ReplyDelete