বিশ্বের কোটি মানুষকে এক সুতায় গেঁথে দিয়েছে জনপ্রিয় ম্যাসেঞ্জার অ্যাপ্লিকেশন ‘স্কাইপ’। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা ল্যাপটপে ইন্টারনেট থাকলে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা, ভিডিও কনফারেন্সিং করা এখন মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র। তবে এবার আর স্কাইপনির্ভরতা নয়, বাংলাদেশি অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপাররাই বানাচ্ছে স্কাইপের বিকল্প। বাংলাদেশি কম্পানি র্যাশোনাল টেকনোলজিস বানিয়েছে ‘লক্ষী’ নামে নতুন অ্যাপ্লিকেশন। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে’ এ সেবা উন্মুক্ত করা হয়।
র্যাশোনাল টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিব চৌধুরী গতকাল বলেন, ‘স্কাইপের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য আমরা দুই বছর ধরে কাজ করে অবশেষে সফল হয়েছি। কিছুদিন ধরে এশিয়া ফাউন্ডেশন, আমেরিকান সেন্টার, ইউএসএআইডিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে এ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেছে।’
সাকিব চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আশা করছি এটি স্কাইপের বিকল্প হবে। স্কাইপে কথা বলতে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে হয়, ফ্রেন্ডলিস্টে না থাকলে কথা বলা যায় না। কিন্তু লক্ষীতে এসবের প্রয়োজন হবে না। সরাসরি https://lokkhi.io/ এই ওয়েব ঠিকানায় গিয়ে অডিও, ভিডিও কনফারেন্সিং করা যাবে। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের ডকুমেন্ট, ভিডিও শেয়ারিংও করা যাবে মুহূর্তের মধ্যে, যা স্কাইপে সম্ভব নয়। আমরা স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও এ সেবা দিতে কাজ করছি।’
শুধু লক্ষীই নয়, উইন্ডোজ, আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্য হাজারের বেশি অ্যাপ্লিকেশন বানাচ্ছে দেশি ডেভেলপাররা। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপে বাংলাদেশের জয়যাত্রা তুলে ধরতে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ২৫টি স্টলে সেজেছে ‘মোবাইল ইনোভেশন’ শীর্ষক প্রদর্শনী। এখানে বাংলাদেশি ডেভেলপার কম্পানির জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে দর্শনার্থীরা।
এদিকে আইফোনের জন্য বানানো গেম প্রদর্শন করেছে রেভারি করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিমা আক্তার জনপ্রিয় গেমস ও অ্যাপ্লিকেশন বানাচ্ছে।’ তিনি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন খাতের বিকাশে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করেন।
দেশের তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তিকে বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, গুগলকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৪’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে স্যামসাংয়ের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। গুগল, মাইক্রোসফট ও ডেলের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে তাদের অফিস স্থাপন করেছে। আমরা তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই। সরকার তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এর ফলে দেশের তরুণ মেধাবী প্রজন্ম নিজের ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।’
বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এ খাতকে থার্স্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সফটওয়্যার ও আইটি ব্যবসাকে আয়করমুক্ত রাখা হয়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ঋণসহ ইকুয়িটি এন্টারপ্রেনিয়রশিপ ফান্ডের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে আর হাত পেতে চলতে হবে না। প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম ২৩ বছরের সংগ্রাম আর ৯ মাসের যুদ্ধের প্রকৃত ফসল ঘরে তুলবে। বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে চলব।’
এ সময় ২০২১ সালের মধ্যে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা রপ্তানি আয় বর্তমানের ১০০ মিলিয়ন থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১১ কোটি সিম ব্যবহার করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজেও একাধিক সিম ব্যবহার করি। আমার ছেলে জয় যখন স্কুলে পড়ে, তখন তার কাছ থেকেই আমি কম্পিউটার চালানো শিখেছি। ১৯৯১ সালে দলের জন্য কম্পিউটার কিনেছি। এর মাধ্যমে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছি।’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে আজকের তরুণরাই গড়বে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে দিনবদলের সনদ বাস্তবায়িত হবে।
বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রথমবারের মতো এত বড় মেলা আয়োজিত হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আমরা বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে চলছি। আমরা আশা করছি, এ খাত থেকে আগামীতে জিডিপির ১ শতাংশ অবদান রাখতে সক্ষম হব।’
আয়োজনের প্রধান প্রকল্প কর্মকর্তা ও বেসিস মহাসচিব রাসেল টি আহমেদ আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সবার সহযোগিতা না পেলে এক মাসের কম সময়ে এত বড় মেলা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন সম্ভব হতো না।
উদ্বোধনের পর লেজার শো’র মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের বিভিন্ন সেবা উপস্থাপন করা হয়। প্রযুক্তির মেলবন্ধনে ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে মেলা চলবে আগামী ৭ জুন পর্যন্ত। তথ্যপ্রযুক্তির এ জমকালো উৎসবে প্রদর্শনী ছাড়াও সেমিনার, কর্মশালা, আইটি জব ফেয়ার ও সিইও নাইট অনুষ্ঠিত হবে।
0 comments:
Post a Comment